বিএনপিতে যোগদানের বিষয়ে এবার মুখ খুললেন গোলাম মাওলা রনি

একসময়ের আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মাওলা রনি এখন বিএনপি নেতা। তিনি পটুয়াখালী-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার অফিসিয়াল পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন রনি। এতে তার বিএনপিতে যোগ দেয়ার কারণ উল্লেখ করেন রনি।

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ছেড়ে বিএনপিতে যাওয়া কারণ ব্যাখ্যা করেছেন গোলাম মাওলা রনি।

গোলাম মাওলা রনির স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল-

‘আমি সারাজীবন যাকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলে এসেছি এবং যার মঙ্গল কামনায় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে বহুবার অঝোরে অশ্রু বিসর্জন করেছি, তার উদ্দেশ্যেই আজকে আমি দু’কলম লিখতে বসেছি।

আমি আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে গিয়েছি নিজের আত্মমর্যাদা ও রাজনৈতিক সত্ত্বা বাঁচিয়ে রাখার জন্য। কারণ আওয়ামী লীগ আমাকে বিগত দিনে একজন উটকো ঝামেলার আবর্জনা ও মূল্যহীন মনে করেছে। দলটিতে আগামী দিনেও যে আমার দু-পয়সার মূল্য হবে না, সেটি অনুমান করার পরই ভেবেচিন্তে বিএনপিতে যোগ দিই।

বিএনপির বর্তমান দুরাবস্থা ও সংকটকালে আওয়ামী লীগের মতো একটি নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে সংকটের সাগরে ঝাঁপ দেয়া কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এমপি হওয়ার লোভ বা অন্য কোনো কারণে কেউ এ কাজ করতে সাহস পাবেন না-যদি না কারও ভেতরে জাতীয় স্বার্থ এবং নিজের রাজনৈতিক সত্ত্বা বাঁচিয়ে রাখার আকাঙ্কা সুতীব্র না হয়ে ওঠে।

আমি বিএনপিতে যাওয়ার পরও আমার সাবেক দল ও নেতানেত্রী সম্পর্কে কটূক্তি করিনি এবং কোনো কালে সেটি সম্ভবও হবে না। বরং গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ বেঁচে থাকুক এই শুভ কামনা সবসময়ই থাকবে। একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশে এ মুহূর্তে যা হচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো শক্তি আমার নেই।

গণতন্ত্রের মানসকন্যার কথা বিশ্বাস করে আমি এবং আমার মতো যারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য মাঠে নেমেছে, তারা যে বর্তমানে কি দুর্ভোগ-দুর্দশা, বিপদ-বিপত্তি এবং প্রাণ সংহারী অবস্থার মধ্যে পড়েছি, তা কেবল আসমানের মালিকই বলতে পারবেন।

রাষ্ট্রযন্ত্রের আশ্বাস, প্রশ্বাস এবং আশ্রয় দেয়ার ক্ষমতার ওপর সাধারণ মানুষের যে অবিশ্বাস, অনাস্থা ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে, তা কবে এবং কোথায় গিয়ে কীভাবে শেষ হয় তা যদি ক্ষমতাসীনরা ভাবতেন, তবে আখেরে তাদেরই মঙ্গল হতো।

আমার নির্বাচনী এলাকা পটুয়াখালী-৩ সংসদীয় আসনের গলাচিপা ও দশমিনায় বিএনপির সামান্যতম নির্বাচনী কর্মকাণ্ড নেই। দুই উপজেলার বিএনপির অফিস তালাবদ্ধ। অন্তত একশ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। প্রায় হাজারখানেক সামর্থবান নেতাকর্মী এলাকাছাড়া। দরিদ্র কর্মীরা পুলিশের ভয়ে বাড়িছাড়া হয়ে ধানক্ষেত, পানের বরজ ও ঝোপে-জঙ্গলে রাত কাটাচ্ছেন।

হাটবাজার, দোকানপাট বেচা-বিক্রি বন্ধ হতে চলেছে। কোনো ভদ্রলোক বেইজ্জতি হবার ভয়ে পারত পক্ষে রাস্তায় বের হচ্ছেন না। লোকজনকে লাঞ্ছিত, অপমানিত ও মারধর করে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্য এলাকায় কি হচ্ছে তা বলতে পারব না। তবে আমার এলাকায় পুলিশি নির্যাতন কীভাবে হচ্ছে তা যদি জননেত্রী জানতেন, তবে নিশ্চয়ই তিনি ঘৃণায় তার সুবোধ বালকদের ভর্ৎসনা করতেন।

জাতির জনকের কন্যা, বঙ্গবন্ধুকন্যা অথবা গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে তিনি যদি এ দেশবাসীর মধ্যে বেঁচে থাকতে চান, তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রশাসনীয় সন্ত্রাস তার সেই আশা-আকাঙ্ক্ষার মূলে যে কতবড় কুঠারাঘাত তা তিনি যদি এখনও বুঝতে পারেন, তবে সবার পক্ষের জন্যই মঙ্গল।’

সমাজে যে ঘৃণা-বিদ্বেষ, প্রতিশোধ স্পৃহা দানা বাঁধছে তা অর্বাচীনরা না বুঝলেও জননেত্রী যে বুঝেন তা আমি দিব্যি করে বলতে পারি।

সূত্র: সময়ের কণ্ঠসর